এবিএনএ: নিজের দলের এবং সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একসঙ্গে রাজপথে নেমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এ আহ্বান জানান।
‘রাষ্ট্র এখন অত্যাচার-নির্যাতনের কারখানা হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশ এখন ঘোর অন্ধকারে। সরকার এই রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভই দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের আত্মাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণমাধ্যম এখন দুটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ বর্তমান সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী। আরেক ভাগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন। যারা সংগ্রাম করছেন, তারা নানাভাবে নিষ্পেষিত। একটার পর একটা মামলা দিয়ে প্রতিহত করা হচ্ছে।’
সংবাদকর্মীরা এখন নিজেরাই সেলফ সেন্সরশিপ করছেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সময় পিছিয়েছে শতাধিকবার। সাংবাদিকদের গুম করে কয়েক মাস পরে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। প্রতিথযশা সাংবাদিকদের গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সমর্থনে কথা বলতে দেখলে লজ্জা লাগে। টেলিভিশনে দেখছি কয়েকজন প্রতিথযশা সম্পাদক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যেমের কর্মকর্তা এই ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যার যে কর্মযজ্ঞ তাকে সমর্থন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা বাদ দেন। আমরা রাস্তার কর্মী, মাঠের কর্মী। মাঠের মধ্যে লড়াই করি, জেলে যাই, অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ঈশ্বর্দীর প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী ৩০ বছর আগে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরের কী টিল মেরেছিল। ত্রিশ বছর পরে বিচারকরা শাস্তি দিয়েছেন। ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে। এটা ইতিহাস। ইলিয়াস আলীকে গুম করে দিয়েছে। এরকম ৬৪৮ জনকে গুম করেছে। সহাস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। আমাদের সম্পাদক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। দেশে আছেন এমন অনেক সম্পাদক-সাংবাদিকদের নিগৃত হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে।এই একটু আগে একজন আমার সঙ্গে দেখা করলেন যে, মাস খানেক আগে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। একমাস জেলে থেকে বেরিয়েছেন। কত বলব, কার কথা বলব? অত্যাচার-নির্যাতন এমন একটা পর্যায় চলে গেছে এখান থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় আছেন। গুরুতর অবস্থা। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত থেকেও তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন এবং সংগঠিত করছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও আজকে আমাদের সঙ্গে শরিক হয়েছেন। সবাই কিন্তু আজকে এগিয়ে এসেছেন। সুতরাং ঘরে বসে থাকার সময় নেই।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই রাজপথে নেমে সমস্ত শক্তিকে এবং জনগণকে সংগঠিত করে যে ভয়াবহ দানব আমাদের বুকের উপর চেপে বসে আছে, তাকে ফেলে দিয়ে এবং পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলি। সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই।’
ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের (একাংশ) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজের (একাংশ) সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কবি আবদুল হাই শিকদার, কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, শূরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, কামাল হোসেন, আতাউর রহমান সরকার, ড. মোবারক হোসেন, গণফোরাম একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান প্রমুখ।